কানাডার স্টুডেন্ট ভিসা প্রসেসিং, কিভাবে আবেদন করবেন ?
কানাডার স্টুডেন্ট ভিসা প্রসেসিং ব্লগ > বর্তমানে উচ্চশিক্ষার ক্ষেত্রে শিক্ষার্থীদের কাছে সবচেয়ে আকর্ষণীয় দেশ হচ্ছে কানাডা। উন্নত জীবনযাপন, চাকরি বা পড়াশোনার জন্য কানাডা বিশ্বের অন্যতম জনপ্রিয় দেশ। পৃথিবীর প্রায় সব দেশের শিক্ষার্থীদের উচ্চ শিক্ষার ক্ষেত্রে প্রথম পছন্দ কানাডা।
কানাডার শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান গুলোর পড়াশোনার মান বিশ্বে গ্রহণযোগ্য। দেশটির ডিগ্রি বিশ্বের প্রথম সারির দেশগুলোর সঙ্গে তুলনীয়। অনেক ক্ষেত্রে আবার আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীদের টিউশন ফি এবং থাকার খরচ অন্যান্য দেশের তুলনায় কানাডায় কম। আন্তর্জাতিক মানসম্পন্ন শিক্ষাব্যবস্থা, পড়াশোনার পাশাপাশি খণ্ডকালীন কাজের সুযোগ, পড়াশোনা শেষে স্বল্প সময়ের মধ্যে অভিবাসী হবার সুযোগ ছাড়াও নানাবিধ সুযোগ-সুবিধার জন্য কানাডাকে বলা হয়ে থাকে উচ্চশিক্ষার স্বর্গরাজ্য।
নর্থ আমেরিকার দেশ কানাডা মূলত শীত প্রধান একটি দেশ এবং পৃথিবীর দ্বিতীয় বৃহত্তম দেশ । এই দেশের আয়তন ৯.৯৮ মিলিয়ন বর্গকিলোমিটার আর জনসংখ্যা ৩,৭৯,৭১,০২০ জন। এই দেশের অফিসিয়াল ভাষা ফ্রেঞ্চ ও ইংরেজী এবং মুদ্রা কানাডিয়ান ডলার। এই দেশের জিডিপি $১.৮১২ ট্রিলিয়ন আর পার কাপিটা জিডিপি হল ৪৯,৯৩১ ডলার। এই দেশের রাজধানী অটোয়া আর সর্ববৃহৎ শহর টরেন্টো।
কানাডার স্টুডেন্ট ভিসা প্রসেসিং, কিভাবে আবেদন করবেন ?
অফার লেটারঃ-
কানাডার ষ্টুডেন্ট ভিসা পেতে আপনাকে প্রথমে কোন একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের অফার লেটার পেতে হবে। এজন্য আপনাকে প্রথমে আপনার পছন্দসই একটি বিশ্ববিদ্যালয়ে আবেদন করতে হবে। বিশ্ববিদ্যালয়ের ওয়েবে প্রদত্ত আবেদন করার নিয়ম অনুসারে আবেদন করে, উক্ত বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অফার লেটার সংগ্রহ করতে হবে।
স্টাডি পারমিটের জন্য আবেদন
কানাডার স্টুডেন্ট ভিসা প্রসেসিং ব্লগ > কানাডায় স্টুডেন্ট ভিসা নামে কোনো ভিসা দেওয়া হয় না। মূলত, স্টাডি পারমিট দেওয়া হয়, যেটাকে স্টুডেন্ট ভিসা বলা হয়। স্টাডি পারমিট মূলত আপনার শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের কোর্সের মেয়াদের উপর নির্ভর করে। অর্থাৎ কোর্সের মেয়াদ যদি চার বছর হয় তাহলে আপনার স্টাডি পারমিটের মেয়াদও চার বছর হবে। সাথে অতিরিক্ত ৯০ দিন দেয়া হবে।
আপনার স্টাডি প্রোগ্রাম যদি ৬ মাস কিংবা তারচেয়ে কম সময়ের হয়, তাহলে আপনাকে কোনো ধরনের স্টাডি পারমিট নিতে হবে না। যদি আপনার পরিবারের কেউ কানাডা থেকে থাকেন, তাহলেও আপনাকে স্টাডি পারমিট নিতে হবে না। একইভাবে আপনার কিংবা আপনার পরিবারের কারো যদি রেজিস্টার্ড ইন্ডিয়ান স্ট্যাটাস থেকে থাকে, তাহলেও আপনাকে স্টাডি পারমিট নিতে হবে না।
স্কলারশিপ নিয়ে স্নাতক করুন কানাডায়
কানাডার স্টাডি পার্মিটের জন্য সর্বপ্রথম সিটিজেনশিপ অ্যান্ড ইমিগ্রেশন কানাডার (CIC) ওয়েবে অনলাইনে আবেদন করুন। অথবা, নিকটস্থ কানাডিয়ান এম্বাসিতে যোগাযোগ করে অফলাইনে আবেদন করুন।
স্টাডি পারমিটের আবেদনের জন্য যে ডকুমেন্টস গুলো লাগবে
স্টাডি পারমিটের পেতে যা যা জানা দরকার সেগুলোর তালিকা নিম্নে দেওয়া হল,
- কানাডার সরকার কর্তৃক অনুমোদিত বিশ্ববিদ্যালয়ের অফার লেটার,
- কানাডায় থাকাকালীন আপনার থাকা, খাওয়া ও পড়ার খরচ বহন করার মতো পর্যাপ্ত আর্থিক যোগান রয়েছে তার প্রমাণপত্র,
- আপনি কোনো প্রকার সন্ত্রাসমূলক কর্মকান্ডে যুক্ত নেই তার প্রমাণপত্র,
- আপনি পুরোপুরি সুস্থ তার প্রমাণ হিসেবে মেডিকেল রিপোর্ট,
- কানাডায় থাকাকালীন আপনি কোনো প্রকার সন্ত্রাসমূলক কর্মকান্ডে যুক্ত হবেন না, তার অঙ্গীকারনামা ।
তবে এই স্টাডি পারমিট দিয়ে আপনি কানাডায় বসবাস করতে পারবেন না । কানাডায় ভ্রমণ ও বসবাসের জন্য আপনাকে টেম্পোরারি রেসিডেন্ট ভিসা অথবা ইলেকট্রনিক ট্র্যাভেল অথোরাইজেশন (ইটিএ) নামক ভিসার জন্য আবেদন করতে হবে।
কানাডায় থাকাকালীন আপনার খরচ চালানোর জন্য পর্যাপ্ত আর্থিক যোগান রয়েছে তার প্রমাণপত্র হিসেবে যে ডকুমেন্টস গুলো যুক্ত করতে হবে :-
- কানাডার ব্যাংকে আপনার নিজের নামের ব্যাংক অ্যাকাউন্ট,
- ব্যাংক স্টেটমেন্ট,
- ব্যাংক ড্রাফট,
- এক বছরের থাকা ও পড়ার খরচ পরিশোধ হয়েছে, তার প্রমাণপত্র।
- যে ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান আপনার ফান্ডিং দিবে, সেই ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান কর্তৃক প্রদানকৃত চিঠি,
- আপনি যদি কোন স্কলারশিপ পেয়ে থাকেন, তবে তার প্রমানপত্র।
এসব কিছু সংযুক্ত করে স্টাডি পারমিটের জন্য আবেদন করতে আপনার খরচ হবে, ১৫০ কানাডিয়ান ডলার । এছাড়া, স্টাডি পারমিটের জন্য আবেদন করার পর নিকটস্থ ভিসা অ্যাপ্লিকেশন সেন্টার থেকে বায়োমেট্রিক ইনফরমেশন অর্থাৎ ফিঙ্গারপ্রিন্ট ও ছবি তুলে পাঠাতে হবে।
আবেদন করার পর করনীয়
কানাডার স্টুডেন্ট ভিসা প্রসেসিং ব্লগ > স্টাডি পারমিটের আবেদন করার ৩০ দিনের মধ্যে আপনাকে চিঠি অথবা মেইলের মাধ্যমে জানিয়ে দেয়া হবে যে, আপনার জন্য বায়োমেট্রিক ইনফরমেশনের দরকার পড়বে কিনা। যদি দরকার পড়ে, তবে উপরে বর্ণিত নির্দেশনার মাধ্যমে বায়োমট্রিক ইনফরমেশন পাঠিয়ে দেবেন।
তারপর আপনার আবেদন ফর্ম যাচাইবাছাই করে দেখা হবে। যদি অসম্পূর্ণ তথ্য কিংবা কোন অতিরিক্ত ডকুমেন্টে সমস্যা থাকে, তবে তারা আপনাকে তা জানিয়ে দেবেন। বিশেষ কোনো ক্ষেত্রে ইমিগ্রেশন অফিস থেকে আপনাকে সাক্ষাৎকারের জন্য ডাকা হতে পারে কিংবা আরো কিছু তথ্য পাঠানোর জন্য বলা হতে পারে।
যদি তারা আপনার আবেদন ফর্ম গ্রহণ করেন, তবে তারা আপনাকে একটি কনফার্মেশন লেটার পাঠাবেন। এই কনফার্মেশন লেটার কানাডা পৌঁছানোর পর ইমিগ্রেশন অফিসে দেখাতে হবে। আর যদি তারা আপনার আবেদন ফর্ম গ্রহণ না করেন, তবে তারা আপনাকে এর কারণ জানিয়ে মেইল পাঠাবেন।
টেম্পোরারি রেসিডেন্ট ভিসার জন্য আবেদন করবেন যেভাবেঃ
কানাডার স্টুডেন্ট ভিসা প্রসেসিং ব্লগ > স্টাডি পারমিট পাওয়ার পর আপনাকে টেম্পোরারি রেসিডেন্ট ভিসার জন্য আবেদন করতে হবে। এই ভিসার জন্য আবেদন করতে আপনার যা যা লাগবে- নির্ভুলভাবে পূরণকৃত আবেদন পত্র। ভর্তিকৃত বিশ্ববিদ্যালয় বা প্রতিষ্ঠান কর্তৃপক্ষ প্রদত্ত অফার লেটারের মূল কপি। চারটি পাসপোর্ট সাইজের ছবি।
আপনার কোর্সের সময়সীমার চেয়ে একমাস বেশি মেয়াদের পাসপোর্ট। আপনার সকল জাতীয় কাগজপত্র, যেমন: জন্মনিবন্ধন, জাতীয়তা পরিচয়পত্র ইত্যাদি। আপনার সব ধরনের একাডেমিক কাগজপত্র। আর্থিক স্বচ্ছলতার প্রমান। স্পন্সরের প্রমানসহ বিস্তারিত তথ্য। স্টাডি পারমিট ফি দেওয়া হয়েছে- তার প্রমাণপত্র। ভিসা এনরোলমেন্টের ইলেকট্রনিক কনফার্মেশনের স্ক্যান কপি ।
কানাডায় ডিগ্রির ধরন ও ভর্তির সেশনঃ
স্নাতক, স্নাতকোত্তর, ডিপ্লোমা এবং পিএইচডি ডিগ্রি। কানাডার অধিকাংশ বিশ্ববিদ্যালয়েই সাধারণত সেপ্টেম্বর থেকে মে পর্যন্ত সেশন থাকে। আবার কোন কোন বিশ্ববিদ্যালয়ে জানুয়ারি, ফেব্রুয়ারি, এপ্রিল ও জুনেও সেশন শুরু হয় হয়ে থাকে।
কানাডা স্টুডেন্ট ভিসা আবেদনে প্রয়োজনীয় কাগজ পত্র
* পাসপোর্টের কপি।
* শিক্ষার্থীদের ফোন নম্বর দ্বারা ইমেল।
* পুলিশ ক্লিয়ারেন্স সার্টিফিকেট।
* মেডিকেল সার্টিফিকেট।
* ডিজিটাল ছবি।
* জাতীয় পরিচয়পত্র এবং অনলাইন জন্মসনদ।
* পাঠক্রম বহির্ভূত কার্যক্রমের সনদ।
* সমস্ত একাডেমিক কাগজপত্র (ট্রান্সক্রিপ্ট + সার্টিফিকেট)।
* রেফারেন্স লেটার।
* স্টেট্মেন অফ পারপাস ।
* কাভার লেটার।
* সিভি।
* ইংরেজি ভাষা দক্ষতার সনদ (IELTS, Duoilingo, TOEFL ইত্যাদি)
* ব্যাংক স্টেটমেন্ট এবং সচ্ছলতা ।
* ট্রেড লাইসেন্স।
* TIN সার্টিফিকেট।
* ট্যাক্স রিটার্ন।
* ভিজিটিং কার্ড।
* পিতামাতার ছবি (পুরানো এবং নতুন)।
* পিতামাতার পাসপোর্ট বা এনআইডি।
* জমি, সম্পত্তি বা সম্পত্তির নথি।
* সম্পদের মূল্যায়ন এবং সম্পত্তির নথি।
খণ্ডকালীন কাজের সুযোগ
কানাডার স্টুডেন্ট ভিসা প্রসেসিং ব্লগ > কানাডায় শিক্ষার্থীদের জন্য রয়েছে খণ্ডকালীন কাজের সুযোগ। সপ্তাহে একজন শিক্ষার্থী ২০ ঘণ্টা কাজ করতে পারেন। মে থেকে আগস্ট মাস পর্যন্ত গ্রীষ্মকাল—এই সময়ে কর্মঘণ্টার সীমাবদ্ধতা থাকে না। তখন আরও বেশি কাজ করা যায়। শিক্ষক সহকারী, বিক্রয়কর্মী, ফুড ক্যাটারিং, গবেষণা সহকারী, কম্পিউটার ওয়ার্কসহ বিভিন্ন খণ্ডকালীন কাজ শিক্ষার্থীরা করতে পারেন। এছাড়া আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীদের জন্য রয়েছে পড়াশোনা শেষে ৩ বছরের ওয়ার্ক ভিসা।
পড়াশোনা শেষে চাকরির সুযোগ
কানাডায় সাধারণত পড়াশোনা শেষ করার পরেই কাজ পাওয়া যায়। শিক্ষার্থীদের দক্ষতা, পরীক্ষার ফলাফল, সৃজনশীলতার উপর মূল্যায়ন করে বিভিন্ন পর্যায়ে কাজের সুযোগ দেওয়া হয়। কানাডার বিশ্ববিদ্যালয়গুলো বছরে বিভিন্ন সময় চাকরির মেলা বা প্লেসমেন্টের বিভিন্ন অনুষ্ঠান আয়োজন করে থাকে। বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন বিভাগগুলো থেকেও নিয়মিত জব-প্লেসমেন্ট করা হয়ে থাকে।
এছাড়াও কানাডার বিভিন্ন সরকারি সংস্থা আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীদের কাজের সুযোগ দিয়ে থাকে। অ্যাকাউন্টিং, প্রকৌশল, মানবসম্পদ ব্যবস্থাপনা, সাপ্লাই চেইন ম্যানেজমেন্ট, আইটিসহ গবেষণাসংশ্লিষ্ট বিভিন্ন ক্ষেত্রে কাজ করার সুযোগ পেয়ে থাকে আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীরা।
More Info - হাঙ্গেরির ওয়ার্ক ভিসা 2023 >>