ইউরোপ ওয়ার্ক পারমিট ভিসা ২০২৪ - ইউরোপ ওয়ার্ক পারমিট ভিসা ফ্রম বাংলাদেশ
ইউরোপ ওয়ার্ক পারমিট ভিসা ২০২৪ - ইউরোপ ওয়ার্ক পারমিট ভিসা ফ্রম বাংলাদেশ - আসসালামু আলাইকুম! প্রিয় পাঠক, বিশ্বের বিভিন্ন দেশে বৈধভাবে ১ কোটি ৩০ লাখের বেশি বাংলাদেশীরা অভিবাসী হিসেবে রয়েছেন । ১৯৭৬ সাল থেকে কাজের জন্য বৈধভাবে বিদেশে যাওয়ার সুযোগ তৈরি হয় । এখনো প্রতিবছর বৈধভাবেই প্রায় ১০ লাখের বেশি বাংলাদেশীরা বিভিন্ন দেশে কাজের সন্ধানে যাচ্ছেন । এছাড়াও জীবিকার সন্ধানে অবৈধ উপায়ে পাড়ি জমাচ্ছেন আরো অনেকেই । বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় শ্রমবাজার মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোর মধ্যে এককভাবে সবচেয়ে বেশি বাংলাদেশি থাকেন সৌদি আরবে যার সংখ্যাটি ৪৫ লাখ এর কাছাকাছি । মধ্যপ্রাচ্যের পর এককভাবে মালয়েশিয়ায় রয়েছেন 12 লাখের বেশি বাংলাদেশী । প্রবাসীদের পাঠানো টাকায় বাংলাদেশের অর্থনীতি এখনো শক্ত অবস্থানে টিকে আছে ।
মধ্যপ্রাচ্যের বিকল্প হিসেবে ইউরোপের শ্রমবাজার ধরতে বেশ জোরেশোরে কাজ শুরু করেছে দেশের পররাষ্ট্র ও প্রবাসীকল্যাণ মন্ত্রণালয় । এরই ধারাবাহিকতায় ইউরোপের ২০ টি দেশে শ্রমবাজারের হাতছানি দেখা দিয়েছে । আসুন জেনে আসি এরই মধ্যে ইউরোপের কোন কোন দেশে কর্মী পাঠানোর প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে । ইউরোপের কোন দেশে কোন কোন খাতে কিভাবে কত জন আছেন এবং সামনের দিনগুলোতে কি ধরনের সম্ভাবনা তৈরী হচ্ছে, এসব তথ্য তুলে ধরবো এই প্রতিবেদনে ।
ভূমধ্যসাগর পাড়ের ইউরোপীয় দেশ গুলোতে বিনা খরচে বাংলাদেশি কর্মীদের নিরাপদ অভিবাসন ও কর্মসংস্থানের জন্য ২০২২ সালের ৯ ফেব্রুয়ারি বাংলাদেশের মধ্যে সমঝোতা স্মারক বা এমওইউ সই হয় । যা ইউরোপের কোন দেশের শ্রমবাজারে বাংলাদেশি কর্মী নিয়ে প্রথম লিখিত কোনো বোঝাপড়া । যা হোক, এখন আসুন জেনে নেই ইউরোপের কোন ৫ টি দেশ বর্তমানে বাংলাদেশের অনেক কর্মীকে কাজের জন্য ভিসা দিচ্ছে?
ইউরোপের যে ৫টি দেশ বর্তমানে বাংলাদেশের প্রচুর কর্মী নিচ্ছে
১/ গ্রীস
গত বছরের জুলাই মাসের শেষ সপ্তাহে গ্রীসের পার্লামেন্ট চুক্তিটির অনুমোদন করে এর ফলে মৌসুমী কাজের ভিসায় ৫ বছরের জন্য ১৫,০০০ কর্মী নেবে গ্রীস । যেসব খাতে কর্মী নেবে তার মধ্যে রয়েছে দেশটির কৃষি পর্যটন ও তৈরি পোশাক খাত বাংলাদেশি কর্মীদের জন্য ৫ বছরের ভিসা সরবরাহ করবে সরকার । প্রতি বছরে ৪ হাজার করে বাংলাদেশি কর্মী যাবেন দেশটিতে । শর্ত অনুযায়ী মৌসুমী ভিসা নিয়ে আসা বাংলাদেশিরা একটি নির্দিষ্ট কাজ নিয়েই গ্রিস আসবেন এবং বছরে নয় মাস গ্রিসে বসবাস ও কাজের সুযোগ পাবেন প্রত্যেক ব্যক্তিকে ৯ মাস পরে বাংলাদেশে ফেরত যেতে হবে ।
যারা নিশ্চিত করার জন্য বাংলাদেশ সরকার দায়বদ্ধ থাকবে দেশে ফিরে আবারো তিনি গ্রীস এ যেতে পারবেন সম্পূর্ণ সরকারি খরচে । এভাবে বছরে ৯ মাস করে সর্বোচ্চ পাঁচ বছর গ্রিসে বৈধ অভিবাসী হিসেবে কাজ করতে পারবেন যেকোন বাংলাদেশী । তবে জানিয়ে রাখি, ৫ বছরের বেশি সময় ধরে কাজ করলেও করলেও কাওকে নাগরিকত্ব বা স্থায়ী বসবাসের জন্য আবেদন করার সুযোগ দেওয়া হবে না ।
২/ রোমানিয়া
ইউরোপ ওয়ার্ক পারমিট ভিসা ২০২৪ ব্লগ > সাম্প্রতিক সময়ে ইউরোপীয় ইউনিয়নের বাইরের দক্ষ ও অদক্ষ অভিবাসন প্রত্যাশীদের কাছে আকর্ষণীয় দেশে পরিণত হয়েছে রোমানিয়া । বিদেশি কর্মীদের জন্য কয়েক হাজার ভিসা চালু করেছে দেশটির সরকার এই সুযোগ কাজে লাগিয়ে ইউরোপীয় ইউনিয়নের সদস্য ভুক্ত এই দেশটিতে আসছেন বাংলাদেশসহ দক্ষিণ এশিয়ার অনেক নাগরিক । বাংলাদেশের প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় বলছে ২০২০ সাল থেকে ২০২২ সাল নাগাদ ১৬ হাজার ৪০৯ জন বাংলাদেশী কর্মীকে ভিসা দিয়েছে রোমানিয়া । এরই মধ্যে ঢাকায় অস্থায়ী কনস্যুলেট খুলেছে দেশটি ।
যে সব খাতে তারা কর্মী নিচ্ছে এর মধ্যে নির্মাণ সেবা জাহাজ নির্মাণ শিল্প সহ বিভিন্ন খাত রয়েছে । তাদের বেতন ৪০০ থেকে ১০০০ ইউরো । এই বেতনের সাথে অনেকের থাকার ব্যবস্থা ও খাবার ভাতা এবং আলাদাভাবে বাড়তি সময়ের মজুরিও দিচ্ছেন । কিন্তু তারপরেও অনেক বাংলাদেশী রোমানিয়া ছাড়ছেন ।
রোমানিয়ায় এসে ইউরোপীয় ইউনিয়নের অন্য দেশে পাড়ি জমানোর চেষ্টা করছেন তারা । এদের বড় একটি অংশের লক্ষ্য ইতালি পাড়ি দেয়া । যদিও বিশেষ ভিসায় আসা বাংলাদেশি কর্মীদের ইউরোপীয় ইউনিয়নের অন্য দেশে যাওয়ার অনুমতি নেই । কিন্তু অনেকেই অবৈধভাবে চলে যাচ্ছেন । যে কারণে বাংলাদেশিদের জন্য রোমানিয়ায় শ্রমবাজার খুললেও কিছু মানুষের জন্য এই সম্ভাবনা ঝুঁকিতে পড়ে যাচ্ছে ।
৩/ মালটা
ইউরোপের একটি স্বাধীন প্রজাতান্ত্রিক দেশ হল মালটা । ভূমধ্যসাগরে অবস্থিত দ্বীপ নিয়ে গঠিত মাত্র ৩১৬ বর্গকিলোমিটার আয়তনের ছোট্ট এ দেশটিতে বৈধভাবে বাংলাদেশ থেকে কর্মী যাওয়ার সুযোগ আছে । প্রবাসীকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী গত দুই বছরে বৈধভাবে ১০৪১ জন বাংলাদেশি মাল্টা গেছেন ।
মালদা যাওয়ার নিয়ম হচ্ছে, কোনো শ্রমিক বৈধ ভাবে যেতে চাইলে স্থানীয় মালিকের সঙ্গে কাজের একটি চুক্তি নিশ্চিত করতে হয়, পরে মাল্টা থেকে অনুমতি পত্র এলে সেই কাগজপত্র মালটা দূতাবাসের জমা দেয়ার পর সব ঠিক থাকলে ভিসা দেয়া হয় । তবে বাংলাদেশে মালটার দূতাবাস নেই, ভিসার জন্যে যেতে হবে ভারতের নয়াদিল্লিতে মালটার দূতাবাসে যেতে হয় ।
তবে বাংলাদেশীদের জন্য ইউরোপের দেশ মাল্টা শ্রমবাজার বন্ধ হওয়ার পথে । কেননা কোন বাংলাদেশী মালটা এসে থাকছেন না । কোনোভাবে মাল্টায় আসতে পারলে তারা ইউরোপের বিভিন্ন দেশে পাড়ি জমানোর চেষ্টা করছেন । অনেকে চলেও গেছেন । এর ফলে মালটার কোম্পানির মালিক পক্ষের সঙ্গে পূর্বের চুক্তি ভঙ্গ হয়ে যায় এবং এই শ্রমিকরা চলে যাওয়ার ফলে কারখানায় শ্রমিক সংকট দেখা দেয় ।
এভাবে ইউরোপের বাজারে আস্থা হারাচ্ছে বাংলাদেশের শ্রমবাজার । উল্লেখ্য যে ইতালির সিসিলি থেকে মাত্র 93 কিলোমিটার দূরে অবস্থিত মালটা । মাল্টা থেকে বাংলাদেশিরা মূলত ইতালি, ফ্রান্স, পর্তুগাল, স্পেন সহ ইউরোপের বিভিন্ন উন্নত দেশে পাড়ি জমায় । বৈধভাবে মালটা এসে দেশটিকে ট্রানজিট হিসেবে ব্যবহার করে অবৈধ উপায়ে অন্য দেশে যাওয়া মোটেও উচিত নয় । এর ফল ভোগ করতে হবে আমাদেরকেই ।
৪/ ইতালি
ইউরোপ ওয়ার্ক পারমিট ভিসা ফ্রম বাংলাদেশ ব্লগ > ইউরোপের দেশগুলোর মধ্যে ইতালিতে অবৈধ ভাবে সবচেয়ে বেশি বাংলাদেশি গিয়েছেন । সরকারি হিসেবে এই সংখ্যা ৫০ হাজারের মতো । দেশটিতে বিপুল কাজের সুযোগ রয়েছে । আট বছর বন্ধ থাকার পর ২০২০ সালের শেষ দিকে এসে বাংলাদেশি কর্মীদের জন্য শ্রমবাজার খুলে দেয় ইতালির সরকার ।
ইতালিতে কর্মী পাঠানোর অনুমোদন পাওয়া ৩০ দেশের তালিকায় তখন বাংলাদেশের নাম ছিল । যে কারণে ২০২১ সালের ১ জুলাই থেকে ৩১ মার্চ ২০২০ পর্যন্ত দেশটিতে গেছেন ১৩৩ জন । বিদেশের বাজারে অনেক সময় আমরা নিজেরাই নিজেদের সুযোগ নষ্ট করি ।
একেবারে বিনা খরচে বা নামমাত্র খরচে ইতালিতে যাওয়ার সুযোগ থাকলেও দালালের ফাদে পরে 10 থেকে 12 লাখ টাকা খরচ করে অবৈধভাবে ইতালি পাড়ি দেয়ার চেষ্টা করেন অনেক বাংলাদেশী । কেউ কেউ হয়তো গন্তব্যে পৌঁছান আর কারও কারও সলিল সমাধি হয় ভূমধ্যসাগরে । এর ফলে বহির্বিশ্বে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি নষ্ট হয় এবং যারা বৈধভাবে ইতালিতে যেতে চান তাদের সর্বনাশ হয় ।
৫/ জার্মানি
ইউরোপের অন্যতম ধনী ও উন্নত দেশগুলোর একটি জার্মানি । বাংলাদেশ থেকে জার্মানিতে বর্তমানে আনুষ্ঠানিকভাবে কর্মী নিয়োগের কোন যুক্তি নেই । কিন্তু দেশটিতে কর্মী পাঠানোর সম্ভাবনা তৈরি হচ্ছে । জার্মানির শ্রমবাজারের সুবিধা পেতে জার্মান সরকারের সঙ্গে জিটুজি অর্থাৎ গভর্নমেন্ট গভর্মেন্ট এর মধ্যে সমঝোতা স্মারক সই এর চেষ্টা চালাচ্ছে কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় । এটি হলে দারুন একটা ব্যাপার হবে ।
তবে ২০২১ সালের ১ জুলাই থেকে ৩১ মার্চ ২০২০ পর্যন্ত বৈধ ভাবে জার্মানির গেছেন ২৭ জন বাংলাদেশি । জার্মানিতে পড়াশোনার জন্য যাওয়ার সুযোগ আছে । এজন্য জার্মান ভাষা জানা থাকতে হয় । তবে ওখানে নাগরিকত্ব পাওয়া খুব সহজ নয় । তাই বর্তমানে ২৩ সালে অনেকেই জার্মানিতে কাজের ভিসায় পাড়ি জমাতে শুরু করেছেন ।
শেষ কথা
ইউরোপ ওয়ার্ক পারমিট ভিসা ফ্রম বাংলাদেশ ব্লগ > আমাদের আজকের এই ব্লগটিতে ইউরোপের ৫ টি দেশ নিয়ে আলোচনা করা হলো । উপরোক্ত দেশ গুলোতে কর্মীদের ভালো অবস্থান তৈরি করতে নিজেদের যোগ্যতা তৈরীর পাশাপাশি যে দেশে অভিবাসী হিসেবে যাবেন সেখানে দীর্ঘমেয়াদী সময় পর্যন্ত থাকা পরিকল্পনা করা উচিত । বৈধভাবে একটি দেশে গিয়ে সেখান থেকে অবৈধভাবে কোথাও চলে যাওয়া উচিত নয় । এতে যেমন নিজেদের জানমালের ক্ষতি হওয়ার সম্ভাবনা থাকে, এর সাথে সাথে দেশের শ্রম বাজারে অনেক খারাপ প্রভাব পড়ে ।
এমন আরো তথ্যবহুল ব্লক গুলো পেতে আমাদের ওয়েবসাইটটি নিয়মিত ভিজিট করতে পারেন । এবং আপনি যদি আরো কোন বিষয়ে জানতে আগ্রহী হয়ে থাকেন তাহলে সেটা আমাদের পোস্টে কমেন্টস বক্সে লিখে যেতে পারেন ।
আল্লাহ হাফেজ ।
More Info -